শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫

‘আমার মেয়েটা কী দোষ করেছে’, মেয়ের রক্তাক্ত দেহ নিয়ে বাবার আহাজারি

প্রকাশিত: শুক্রবার, জুন ৬, ২০২৫

পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও কন্যাসন্তান মেহেরিমা নূর আয়েশাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন সাজ্জাদুন নূর। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করেন তিনি। যাওয়ার কথা ছিল বোয়ালখালী উপজেলার পূর্বগোমদণ্ডী ইউনিয়নে। কিন্তু কালুরঘাট সেতুতে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেন অটোরিকশাটিকে এক ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় সাজ্জাদুন নূর ও তাঁর স্ত্রী জুবাইয়া ইসরা বেঁচে গেলেও প্রাণ হারিয়েছে দুই বছর বয়সী আয়েশা। এ সময় মেয়ের নিথর দেহ কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাজ্জাদুন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেসের ধাক্কায় কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এ ঘটনায় শিশু আয়েশাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও তিনজন। আহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর আয়েশা ও তাঁর মাকে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা আয়শাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর তাঁর মাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই হাসপাতালে ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সন্তান হারানোর শোকে আহাজারি করছেন সাজ্জাদুন নূর। বারবার বলছিলেন, ‘আমার মেয়েটা কী দোষ করেছে? আমি হয়তো গুনাহ করেছি, আমার ৩০ বছর বয়স হয়েছে। আমার দুই বছরের বাচ্চাটা কী করেছে।’ একটি পানির বোতল দেখিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েটা পানি খেতে চেয়েছিল, তাই বোতল কিনেছি। এখন সব শেষ।’

সাজ্জাদুন পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার। আয়েশা ছিল তাঁদের একমাত্র সন্তান। স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন সাজ্জাদুন। পরিবার নিয়ে ঈদ উদ্‌যাপন করতে বোয়ালখালী উপজেলার পূর্বগোমদণ্ডী ইউনিয়নে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু শেষমেশ বাড়ি ফিরতে হলো শিশুকন্যার মরদেহ নিয়ে।

সাজ্জাদুনের চাচাত ভাই কাউসার বাপ্পি দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে জানান, রাতেই তাঁরা আয়েশার মরদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

দুর্ঘটনার বিষয়ে জানালিহাট স্টেশনমাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন রাতে প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটক এক্সপ্রেস কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে। রাত ১০টায় কালুরঘাট সেতু এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় সেতুর ওপর কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল ছিল। সেতুর ওপর একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অন্য গাড়িগুলো আটকে ছিল।

নেজাম উদ্দীন আরও বলেন, ‘নিয়ম হলো, ট্রেন সেতুটির পূর্ব প্রান্তে এসে দাঁড়াবে। এরপর লাইনম্যানের সংকেত নিয়ে সেতুতে উঠবে। কিন্তু ট্রেনটি সংকেত অমান্য করে দ্রুতগতিতে সেতুতে উঠে যায়।’

জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, দুর্ঘটনায় আয়েশাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। সবাইকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আরো পড়ুন